পিসিপি এয়ারগান ব্যবহারকারীদের জন্য কিছু টিপ্স

February 22, 2021

আমাদের দেশে অনেকেই গত দশ বছর থেকে পিসিপি এয়ারগান ব্যবহার করছেন। নিজে দুটো পিসিপি ব্যবহার করে আমার যা অভিজ্ঞতা হয়েছে সেটাই আপনাদের সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করছি।

পিসিপি এয়ারগান কেনার আগে খুব ভাল মত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দরকার বলে আমি মনে করি। যেহেতু এটা নতুন প্রযুক্তি, নিজে নিজে রিপেয়ার করাটা একটু রিস্কি। অন্তত: নিয়ম জেনেই করা উচিত। তাছাড়া এক একটা পিসিপির দাম প্রায় আকাশ ছোঁয়া আমাদের দেশে। অনেকেই পিসিপি কিনে হজম করতে পারেন না, কিছুদিন পরই বিক্রি করে দিতে চান। তখন বেশ বড় অ্যামাউন্ট লস খেতে হয়। তাই বুঝে শুনেই এগুনো উচিত।

রক্ষণাবেক্ষণ:

o rings

যে কোন ও-রিং চেঞ্জ করতে হলে আপনার প্রথম কাজ হবে আপনার পিসিপিকে ডি-গ্যাস করে নেওয়া। ডি-গ্যাস মানে হচ্ছে এয়ারগানের সিলিন্ডার, রেগুলেটর সম্পূর্ন বাতাস মুক্ত করা। তারপর খোলাখুলি।

সাধারনত: হার্ডওয়ার দোকানে যেসব ও-রিং কিনতে পাওয়া যায়, সেটা কখনই পিসিপিতে ব্যবহার করা যায় না। পিসিপির ও-রিং গুলো অ্যামাজন থেকেই কিনতে পারবেন। এগুলো দেশে আসতে কোন বাধা নেই। সাথে অবশ্যই সিলিকন গ্রীজ বা সিলিকন ওয়েল নিয়ে আসতে হবে। ও-রিং ইনস্টলের সময় সেগুলোকে লুব্রিকেট করার জন্য। সিলিকন গ্রীজ /ওয়েল ছাড়া অন্য গ্রীজ, ওয়েল এগুলো পিসিপিতে ব্যবহার হারাম। এমনকি ব্যালিস্টল, WD-40 ও ব্যবহার করা যাবেনা। নইলে যেকোন সময় বিস্ফোরণ ঘটে যেতে পারে।

পিসিপি যখন অনেক দিন ব্যবহার করবেন না তখনও কমপক্ষে 1000 PSI পাম্প বা তার বেশি বাতাস  যেন সিলিন্ডারে থাকে। পাম্প না থাকলে ও- রিং গুলো নষ্ট হবে। লিক হওয়ার সম্ভবনা বেড়ে যাবে। ডি-গ্যাস টুল এর অপ্রয়োজনীয় ব্যবহারও পিসিপি লিক হওয়ার অন্যতম কারন।

আউটডোর শুটিং এর সময় রোদে পিসিপি রাখবেন না। এতে বাতাসের প্রেশার খুব বেড়ে যাবে। ছোটবেলায় আমরা যখন ফুটবল খেলতাম, তখন অল্প লিক হওয়া ফুটবল রোদে রেখে দিতাম, বিকেল হতে হতে ফুটবল সুন্দর পাম্প হয়ে যেত। তাপমাত্রা বাড়লে বাতাসের সম্প্রসারণ ঘটে। এটাই কারন।

 

পিসিপি এয়ারগান  বনাম স্প্রিংগার এয়ারগান :

আমার কাছে পিসিপি আর স্প্রিংগারের পার্থক্য টা কারের সাথে মোটরসাইকেলের মত মন হয়েছে। কার = পিসিপি এয়ারগান, মোটরসাইকেল = স্প্রিংগার এয়ারগান। পিসিপি অ্যাকুরেসী, শক্তি  সবই অতুলনীয় এবং রিকয়েললেস। ঝাঁকুনি কম থাকার জন্য স্কোপ নষ্ট হয় না বললেই চলে। কিন্তু পিসিপির দাম বেশি, রক্ষণাবেক্ষণ খরচ বেশি। সাথে যে পাম্পার বা কম্প্রেসর থাকে, তারও দাম অনেক ২৫,০০০-৪০,০০০। বলে রাখা ভাল, MK4 Hill Pump বিশ্ব সেরা।  এগুলোরও যত্ন নেওয়ার প্রয়োজন এবং পাম্পগুলো পিসিপি’র চেয়ে কোন অংশে কম না। এখানেও ও-রিং, সিলিকন গ্রীজ ব্যবহার করতে হয়।

Silicone grease

স্প্রিংগারের সবচেয়ে বড় সুবিধা আনলিমিটেড পাওয়ার ব্যাংক। যতবার খুশি ফায়ার করুন। বাতাস শেষ হওয়ার চিন্তা নাই। কিন্তু শক্তি কম, রিকয়েল বেশি। ম্যাগনাম রেটেড স্প্রিংগারে ভাল স্কোপ না হলে অল্পতেই স্কোপ নষ্ট হয়। তবে ৩-৪ হাজার টাকা খরচ করে স্প্রিং, ওয়াশার চেঞ্জ করলেই আবার নতুন হয়ে যায়। সে হিসেবে দারুন সাশ্রয়ী।

 

দামী পিসিপি কেন কিনবেন অথবা কিনবেন না? (মশা মারতে কামান)

সারাবিশ্বে FX Airgun  গুলো খুব জনপ্রিয়। অনেক বড় এয়ারট্যাংক, দারুন পাওয়ার আর অ্যাকুরেসী। কিন্তু দাম টাও দারুন। মি. ম্যাট ডুবার এর ভিডিও-তে 200-300 গজে মার দেখে আমাদের সবার মাথা নষ্ট হয়ে যায়। মনে হয়, আমরা FX Airgun কিনলে 300 গজে লাগাতে পারবো, তাই না? তার আগে একটা প্রশ্ন, আপনাকে কি বিরাট কোহলির ব্যক্তিগত ব্যাট হাতে ধরিয়ে দিলে তারমত ব্যাট করতে পারবেন? ভ্যালিন্টিনো রসি’র বাইক দিলে তারমত বাইক চালাতে পারবেন?

চেষ্টা করলে মানুষ সবই পারে। কিন্তু কাজটা খুব সহজ হবে না। তাছাড়া তাদের অভিজ্ঞতা ও দক্ষতার পাশাপাশি তাদের টুলস গুলো কি ব্যবহার করে সেটাও দেখার বিষয়। পিলেট দিয়ে লং শট করে সব ১০০ গজের মধ্যেই। এর চেয়ে লং শট গুলো করতে স্লাগ ব্যবহার করা হয়। স্লাগ ব্যবহার করতে হলে স্লাগ ব্যারেল দরকার। তাছাড়া বাংলাদেশে স্লাগ পাবেন কোথায়?

 

স্কোপ যেগুলো ব্যবহার করে সেগুলো অ্যাজটেক, এলিমেন্ট এর। এক একটার দাম ৭০-৮০ হাজার। উইন্ড মিটার, রেঞ্জ ফাইন্ডার, বাইপড আছেই। মানে FX Airgun এর সব সুবিধা পেতে আপনার এই টুলস গুলো অবশ্য প্রয়োজনীয়। নইলে শুধু শুধু আমার একটি FX Airgun  আছে, শুধু লোক দেখানোই হবে। কাজে লাগবেনা। FX Airgun ছাড়াও অনেক ভাল পিসিপি আছে। ডে স্টেট, ক্যালিবারগান (KalibrGun) ইত্যাদি। মিড টু লো  রেঞ্জ এর মধ্যে জেব্রোইয়া, আর্টিমিস, উমারেক্স, এয়ার ভেঞ্চুরী, ক্রাল পাঞ্চার, বেঞ্চামিন সবই ভাল।

আমার ব্যবহৃত দুটো পিসিপি:

  • উমারেক্স গন্টলেট:
Umarex Gauntlet

রাইফেল স্ট্যান্ডাড সাইজ। ৩০০-৩৫০ ডলার দাম। কিন্তু অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি গান। ইউটিউবে এর চেয়ে বেশি ভিডিও আর কোন গানের নেই। কারন দাম কম হলেও পারফরমেন্স মিড রেঞ্জ পিসিপির মতই। সাইজ টা বড়, কিন্তু লং ব্যারেল মানে লং রেঞ্জ- সেই হিসাবে ঠিক আছে।

সবচেয়ে বড়কথা এর সমস্ত স্পেয়ার পার্টস গুলো অ্যামাজনে পাওয়া যায়। পাওয়ার লেভেল ২৫ ফুট পাউন্ড ১৮.১৩ গ্রেন পিলেটে। এদেশের জন্যে যথেষ্ঠ। সর্বোচ্চ 200 BAR (3000 psi) পাম্প দেওয়া যায়। ফুল পাম্পে সর্বোচ্চ চল্লিশটি শট করা যায়। ম্যাগাজিনে ১০ টা গুলি ধরে।

অসুবিধা মাত্র দুইটা। ভুল করে ডাবল, ট্রিপল পেলেট লোড হয়ে যেতে পারে। নিজেকে মনে রাখতে হবে সেটা। অন্যটা ককিং লিভার মাঝে মাঝে ঢিলা হয়ে যায়। যেটা তিনটা নাট খুলে সহজে টাইট করা সম্ভব। অ্যাকুরেসী ১০০ গজের মধ্যে ২ ইঞ্চি । ৫০ গজে ১/২ ইঞ্চি। স্কোপ রেইল ডাভ টেইল। আমাদের মাউন্ডগুলো সবই ডাভ টেইল হয়। এটাও একটা সুবিধা। আমার ওভারঅল রেটিং: 7/10।

  • জেব্রইয়া কোজাক:

আমার জীবনের সেরা গান। দারুন পাওয়ার, ৩২ ফুট পাউন্ড। শব্দ খুবই কম। লোথার ওয়ালথার ব্যারেল- মারাত্মক অ্যাকুরেট। সেমি বুলপাপ তাই সহজেই বহনযোগ্য। পিকাটেনি স্কোপ রেইল।

Picatinny rail

মানে মাউন্ট টা স্পেশাল অর্ডার  দিয়ে কিনতে হবে। সর্বোচ্চ 300BAR (4351 psi) পাম্প দেওয়া যায়। ফুল পাম্পে সর্বোচ্চ 65টি শট করা যায়। ম্যাগাজিনে ১০ টা গুলি ধরে। অ্যাকুরেসী ১২০ গজে দেড় ইঞ্চি । আমার ওভারঅল রেটিং: 8/10.  আর কি চায়, দিপিকা?

আজ এই পর্যন্তই। ভাল থাকুন।

-মুহাম্মদুল্লাহ্ চৌধুরী

Tags: , , , ,

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!