শীতে ফিট থাকুন

প্রত্যেক গ্রীষ্মে মনেহয় কখন শীত আসবে? শীতকালটা অনেকটা উৎসবের মতই মনে হয়। এবার কিন্তু শীতটা অত্যন্ত জাঁকিয়ে পড়েছে। এত শীত যে মনে হচ্ছে কবে বিদায় হবে এই কষ্টকর শীত। কিন্তু যতই চেষ্টা করি, আবহাওয়াকে তো আর নিয়ন্ত্রণ করা যায়না। তাই এই প্রচন্ড শীতে ফিট থাকতে কি করবেন, এই নিয়েই আলোচনা।

কি পরবেন?
প্রথমত: গরম থাকতে নিয়মিত জুতো মোজা পরুন। নিচে অবশ্যই স্যান্ডো গেঞ্জি পরবেন। স্যান্ডো গেঞ্জি বা ভেস্ট পাতলা মনে হলেও শরীর গরম রাখতে অতুলনীয়। যারা গ্রীষ্মে শার্টের নীচে স্যান্ডো গেঞ্জি পরেন, তাদের দেখে আমি রীতিমত ভিরমি খাই। নিচের পোশাকগুলো পরবেন টাইট, আর জ্যাকেট হবে এমন যার মধ্যে তুলো থাকে। কান ঢেকে রাখতে হবে সেইসাথে। এখন যেমন ঠান্ডা চলছে এতে আমাদের দেশের স্টাইলিস্ট জ্যাকেট, কোট গুলো কোন কাজে আসবে না।

প্রয়োজনে ফুটপাথ থেকে কিনুন। ওখানকার জ্যাকেট গুলো দেশী জ্যাকেটগুলোর চেয়ে অনেক গরম হয়। প্যান্টের নিচে টাইটস পরুন। অথবা নিচে ট্র্যাকস্যুট এর ট্রাউজারস এবং উপরে জিন্স পরুন। প্রায় দেখা যায়, (বিশেষ করে আমাদের গ্রামে) গায়ে একগাদা কাপড়-সোয়েটার, জ্যাকেট, মাফলার, চাদর আর নিচে আসল পালসার লুঙ্গি। যার এত কিছু কেনার সামর্থ আছে, সে নিশ্চয় ট্রাউজারস কিনে পরতে পারে। এছাড়া সবখানেই দেখা যায়, শীতে প্রায় বাঁকা হয়ে গেছে তবুও পাতলা একটা হুডি পরে ঘুরছেন! “আমার মোটেই শীত করেনা”এতে কি প্রমাণ করার চেষ্টা থাকে, তা আমার কাছে দূর্বোধ্য। যারা মোটরসাইকেল চালান, তাদের শরীর গরম রাখা আরও জরুরী। প্রচন্ড ঠান্ডায় বাইকের উপর নিয়ন্ত্রণ থাকবেনা। শুধু ঠান্ডা লাগা নয়, ট্রাকের নীচে ঢুকে যাওয়ারও সম্ভবনা থেকে যায়। সব রকম গরম কাপড়, জুতো, গ্লাভস এবং অবশ্যই ফুলফেস হেলমেট পরবেন।

গোসল:
শীতকালে গোসল করা বেশ কঠিন কাজ। গোসল প্রয়োজন হলে করবেন তবে হালকা গরম পানিতে। রোজ গোসল না করলে দুনিয়া উল্টে যাবেনা। খুব ঠান্ডা হলে না করায় ভাল। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের। গোসল করে সারা গায়ে অলিভ ওয়েল মাখলে চামড়া টানটান থাকবে। অলিভ ওয়েল যেকোন বডি লোশনের চেয়ে ভাল। ঠোঁট ফাটা রোধ করতে নিয়মিত নাভিতে অলিভ ওয়েল দিবেন।
কষ্টকর হলেও সর্দি, কাশি ও নিউমোনিয়া জাতীয় রোগ থেকে বাঁচতে হাত সাবান দিয়ে ভাল করে ধোয়া অভ্যেস করুন। বিশেষ করে বাইরে থেকে এলে।

ব্যায়াম:
নিয়মিত ব্যায়াম করুন। তবে ওয়েট লিফটিং করার আগে শরীরকে যথেষ্ঠ পরিমানে গরম করে নিতে হবে। এ’জন্যে স্কিপিং, দৌড়, জাম্পিং জ্যাক ভাল। ব্যাডমিন্টনও খেলতে পারেন। (ব্যাডমিন্টন কে অনেকে র‌্যাকেট খেলা বলেন কেন জানিনা, ক্রিকেট খেলাকে ব্যাট খেলা বললে কেমন লাগবে?)। ব্যাডমিন্টন আমাদের শরীরকে বেশ গরম রাখতে পারে।

তবে যাদের হাঁপানির সমস্যা, তারা সন্ধ্যেয় কুয়াশার মধ্যে না খেলায় ভাল। ব্যায়ামের কাজগুলো বিকেলেই শেষ করা দরকার। হঠাৎ করে কোথাও টান পড়ার প্রবণতা শীতকালে বেশি। তাই অবশ্যই গা গরম করে ব্যায়াম করবেন। তাছাড়া প্রচন্ড ঠান্ডায় বাইরে দৌড়ানোর চেয়ে ঘরেই ব্যায়াম করা উচিত।

কি খাবেন?
শীতের সকালে বেশি করে প্রোটিন খান। তাছাড়া এখন নানা ধরনের শাকসবজি পাওয়া যায়। সবগুলো বেশ অনেকক্ষণ পানিতে ডুবিয়ে রেখে তারপর খাবেন। চারিদিকে কীটনাশকের ছড়াছড়ি। গাজরকে গোল্ড সোর্স অব ভিটামিনস বলা হয়। রোজ একটা করে খাবেন। যেহেতু এখন ঠান্ডা লেগে যাওয়ার সম্ভবনা বেশি, এই সময় বাদাম, ওটস, আপেল, লেবু জাতীয় ফল খেলে ইমিউনিটি অনেক বেড়ে যায়। তাছাড়া গ্রীন টী নিয়মিত পান করুন। দুপুরে টক দই খান।

তাছাড়া পেঁয়াজ, রসুন, আদা, হলুদ যুক্ত মসলাদার খাবারও আপনার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দেবে। ভিটামিন সি ট্যাবলেট নিয়মিত খেতে পারেন। রাত জাগবেন না। সুস্থ থাকতে লম্বা ঘুম দিন।

বি:দ্র: শীতে প্রায় আগুন লাগবার ঘটনা ঘটে। এই তো সেদিন একজন মহিলা আগুন পোহাতে গিয়ে পুড়ে মারা গেলেন। রুম হিটার, গরম পানি ইত্যাদি সাবধানে ব্যবহার করুন। বিশেষ করে বাচ্চাদের সাবধানে রাখুন। আপনার শীত আনন্দময় হোক।

Leave a Comment

Don`t copy text!