”পারস্যের বিখ্যাত কবি শেখ সাদী দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে একবার গিয়েছেন অভিজাত এক ব্যক্তির বাড়ি। পরনে সাদাসিধে পোশাক। এ কারণে তেমন আপ্যায়ন করা হলো না তাকে। মুড়ি-মুড়কি গিলতে হলো শেখ সাদীকে।
পারস্যের বিখ্যাত কবি শেখ সাদী দীর্ঘ ভ্রমণ শেষে একবার গিয়েছেন অভিজাত এক ব্যক্তির বাড়ি। পরনে সাদাসিধে পোশাক। এ কারণে তেমন আপ্যায়ন করা হলো না তাকে। মুড়ি-মুড়কি গিলতে হলো শেখ সাদীকে।
পরে কোনো এক উপলক্ষে সাদী ওই বাড়িতে আবার গেলেন। এবার কবির পরনে ঝকঝকে চকচকে মূল্যবান পোশাক। গৃহকর্তা এবার নিজেই খাবার এগিয়ে দিলেন। সাদী সব খাবার না খেয়ে আলখাল্লার জেবে ঢোকাতে লাগলেন!
গৃহকর্তাসহ সবাই বিস্মিত! সাদী তখন ব্যাখ্যা করে বললেন, ‘আমি তো কিছু নই। আমার সব সম্মান তো আমার পোশাকের জন্য। সেই বরং খাক এ সব!’
শেখ সাদীর এ গল্পের নাম ‘পোশাকের গুণ’।”
পোশাকের যে আলাদা একটা মর্যাদা আছে আমাদের এই সমাজে তা কে না জানে। তাই স্মার্ট লোকের চাহিদা সবখানেই আছে। ফ্যাশন সচেতন পুরুষদের জন্য আমাদের বাছা্ই করা সাজেশন দেওয়া হল।
বাটন ডাউন শার্ট : যেসব শার্টের কলারে বাট্ন থাকে, সেগুলোকে বাটন ডাউন শার্ট বলে। অন্য শার্টের চেয়ে এতে আপনাকে বেশি স্মার্ট লাগবে। সরু টাই এর সাথে ব্লেজার পরলে আপনাকে অত্যন্ত ফ্যাশনেবল মনে হবে। বাটন আপ শার্টগুলো ক্যাজুয়াল ড্রেসের ক্ষেত্রে বেশি ভাল মানায়।
ক্রূ নেক জাম্পার: সামনে শীত। সুতরাং এ’রকম হালকা সোয়েটার বেশ কাজের। ক্রূ নেক বলতে গোল গলা বোঝায়, আর ভি-শেপ তো আগে থেকেই চেনেন। ক্রূ নেক সোয়েটারগুলো ক্যাজুয়াল ড্রেস হিসাবে পরবেন। ভি-শেপে যেহেতু টাই দেখা যায়; সে’জন্য ফরমাল ড্রেসের ক্ষেত্রে পরতে হয়। ক্র নেক জাম্পার যখন তখন পরা যায় বলে আপনার চেস্ট অব ড্রয়ারে থাকা জরুরী। নিচে টি-শার্ট পরবেন বা ক্যাজুয়াল শার্ট। কলার ভেতরে থাকবে-বের করবেন না।
পেট্রোল ব্ল স্যুট: কালো স্যুটের পাশাপাশি আপনার সংগ্রহে একটা নীল সুট থাকা খুব জরুরী। সাথে কালো মোজা পরবেন না। মোজার রঙ হবে অনেকটা আপনার ট্রাউজারের মত। নিচের শার্ট অবশ্যই সাদা হতে হবে। টাই হবে হালকা সবুজ বা নীল। সব ঠিক থাকলে পার্টিতে আপনিই মাচো ম্যান।
কালো বা ব্রাউন বুট: একটা ভাল বুট আপনাকে যেভাবে অন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে-অন্য কিছু তা পারেনা। আমি নিজেই বুটের খুব ভক্ত। বুট তো অনেক রকম হয়। আপনি যদি অ্যাডভেঞ্চার পারপাস বা কাজের জন্য বুট পরেন সেগুলো অন্য বুট। ওগুলো ক্যাজুয়াল ড্রেসের সাথে খুব ভাল। পরতে হবে কালো জিনসের সাথে। এছাড়া ড্রেস বুট গুলো ফরমাল ড্রেসেও পরা যায়।
স্নিকারস: ক্যাজুয়াল ড্রেসের জন্য সাদা স্নিকারস অপরিহার্য। অন্য রঙের চেয়ে সাদার গুরুত্ব বেশি। তবে যদি একান্তই সাদা পরতে না চান তাহলে আপনার সেকেন্ড চয়েস হবে হালকা নীল। উঁচু গলার স্নিকারসও পাওয়া যায়। তবে আমি বলবো নিচু গলায় বেশি ভাল। ভাল কথা, কাদা মাখা নোংরা স্নিকারস চলবেনা। অবশ্যই পরিষ্কার হতে হবে।
টি-শার্ট: আমাদের দেশের গরমে টি-শার্ট খুবই আরামদায়ক। দু’ধরনের টি-শার্ট আছে। ভি নেক আর ক্রূ নেক। লম্বা গলা যাদের- তাঁরা গোল গলা (ক্রূ নেক) পরবেন। আর যাদের ছোট গলার সাইজ, তারা পরবেন ভি নেক। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হাফ হাতা পরবেন। তবে অল্প শীতে ফুল হাতাও পরতে পারবেন। বিভিন্ন লোগো সমৃদ্ধ টি-শার্ট পরবেন না। যদি কোন খেলা দেখতে বা কনসার্টে যান তাহলে আলাদা কথা। টি-শার্ট হতে হবে কিছুটা টাইট, তাহলে মানাবে। খুব ঢিলেঢালা বা খুব টাইট হলে চলবেনা।সেইসাথে ঝলমলে টি-শার্টও বাতিল। টি-শার্ট ফেড হয়ে গেলে পরবেন না। জিনসের ফর্মূলা এখানে চলবেনা। একটু পুরনো হলেই বাতিল। সাদা, কালো (কালো পরুন শুধু শীতে), নেভি ব্ল টি শার্ট জিনসের সাথে পরুন। চিনো’র সাথেও পরা যায়। টি-শার্টটি যেন ভাল মানের কটন হয় তা লক্ষ্য রাখুন।
হিডেন শকস: মোজা ছাড়া জুতো পরলেও একটা সমস্যা হলো পায়ের দুর্গন্ধ বাইরে চলে আসে। তারা অবশ্যই হিডেন শকস বা লুকোন মোজা পরবেন।
লেদার জ্যাকেট: পুরুষদের জন্য অপরিহার্য পোশাক। জিন্স, বুট এবং লেদার জ্যাকেট দারুন কম্বিনিশন। গত ৭০ বছর থেকে লেদার জ্যাকেট তার রাজত্ব চালিয়ে আসছে-যা এতটুকু ফিকে হয়নি। অবশ্যই একটা ভাল মানের লেদার জ্যাকেট সংগ্রহে রাখুন।
ফ্যাশন সচেতনদের এ’ রকম ভাবে জিন্স পরা চলবেনা।
জিনস: আমরা অনেকেই দোকানদারদের পছন্দের উপর নির্ভর করেই জিন্স পরে থাকি। যদিও সেই দোকানদারের বিন্দুমাত্র ফ্যাশন সম্পর্কে জ্ঞান নেই। ভাল ব্র্যান্ডের নীল ও কালো জিনসই বেস্ট। আপনার জিনস যেন মাপমত হয়। এত লম্বা না হয় যাতে ভাঁজ করে পড়তে হয় বা জুতোর উপর পড়ে থাকে (উপরের ছবিগুলো দেখুন)। প্যান্টের লেংথ হতে হবে ফুল ব্রেক বা হাফ ব্রেক। আমি অবশ্য প্যান্টের ব্রেকের ক্ষেত্রের নো ব্রেক ফলো করি। কারন গোড়ালীর নিচে পরা ইসলাম সাপোর্ট করেনা।
থাই হবে চিমটি দিলে যেন হাফ ইঞ্চি মত ওঠে, খুব জোর এক ইঞ্চি। কোমরে যেন ঠিকমত ফিট হয় বেল্ট ছাড়ায়। তবে খুব টাইট হবেনা। নিতম্ব খুব ঢিলা বা টাইট হবেনা। চিনো’ও পরুন স্লিম ফিট, সাথে সাদা টি-শার্ট।
ঘড়ি: একটা ভাল ঘড়ি পরুন। বলা হয়, এটা এমন একধরনের পুরুষালী অলংকার যা সারা বিশ্বে গ্রহনযোগ্য। সময় দেখার জন্য স্মার্টফোন দেখা খুব একটা শোভন নয়! স্পোর্টস ওয়াচ, ক্রনোগ্রাফ খবরদার স্যুটের সাথে পরবেননা। আপনার ঘড়ির ডায়াল হতে হবে সাদা-তাহলে যেকোন স্যূটেই মানাবে । কালো স্যুটের সাথে কালো চামড়ার বেল্টওয়ালা ঘড়ি পরুন। ব্রাউন স্যুটে ব্রাউন বেল্টওয়ালা ঘড়ি। ক্যাজুয়াল ড্রেসে স্পোর্টস, ক্রনো ঘড়ি গুলো পরবেন। কবজির চওড়া অনুসারে ঘড়ির মাপ হবে। সরু কবজি হলে সরু ঘড়ি ৪০ মিমি এর নিচে । চওড়া কবজিতে ৪০ মিমি এর উপরে।
বেল্ট: বেল্ট পরুন তবে সেটা যেন বড় না হয়। কোমর যদি ৩৪ ইঞ্চি, বেল্ট কিনুন ৩৬ ইঞ্চির। আপনার মাপের দু’ইঞ্চি বেশি হবে। তাহলে খুব বড় বা ছোট মনে হবে না। বেল্টের চওড়া হবে দেড় ইঞ্চি। বিশেষ করে ফরমাল ড্রেসে। ২ ইঞ্চি চওড়া হবে ক্যাজুয়াল ড্রেসে। বড় বাকলস এর বেল্ট পরবেন না। আপনি তো আর কাউবয় নন।
এ রকম রঙের সানগ্লাস চলবেনা। আপনি জোকার হলে আলাদা কথা।
সানগ্লাস: ফ্যাশন সচেতন মানুষের সানগ্লাস অবশ্যই প্রয়োজন। ড্রেসের সাথে ম্যাচ করতে হবে না এক্ষেত্রে। কালো সবচেয়ে ভাল। আপনার মুখের শেপের উল্টোটা হবে সানগ্লাসের শেপ। তাহলে মানাবে। সাধারনত: মানুষের তিন/চার ধরনের ফেস দেখা যায়।
- রাউন্ড
- ওভাল
- স্কয়ার
- হার্ট শেপ
আপনার গোলমুখে প্রয়োজন প্রয়োজন স্কয়ার ফ্রেম। নিচের ছবির মত:
ওভাল বা হার্ট টাইপ যাদের ফেস, তারা ভাগ্যবান। যেকোন ফ্রেমই তাদের জন্য পারফেক্ট। স্কয়ার টাইপ মুখের মানুষ যারা- তারা ব্যবহার করুন ওভাল ফ্রেম।
আজ এ’পর্যন্তই। বডি বিল্ডিং টিপস পেতে এখানে দেখতে পারেন। কৃতজ্ঞতা: সব ছবিই গুগল থেকে নেওয়া। টিপসগুলো সংগ্রহ করা হয়েছে বিভিন্ন ফ্যাশন ম্যাগাজিন থেকে।