বডি বিল্ডিং এ স্বাগতম

September 16, 2019

আজকাল শহরের আনাচে কানাচে ব্যায়ামাগার বা জিমনেশিয়াম দেখা যায়। কিন্তু ভাল ইনস্ট্রাকটার না থাকায় অনেকে ভুল ভাবে ব্যায়াম করেন যা লাভের থেকে ক্ষতি হওয়ার সম্ভবনা বাড়িয়ে দেয়। মাচো টীম অনেক আগে থেকেই বডি বিল্ডিং এর সাথে যুক্ত। আধুনিক ও সঠিক নিয়মে বডি বিল্ডিং করার জন্য যা প্রয়োজন তাই নিয়েই আজকের আয়োজন।

 

প্রথমত: আপনি কি সত্যিই বডি বিল্ডিং করতে চান? নাকি আপনার লক্ষ্য ফিট থাকা, শরীরের ওজন কমানো? প্রথমে কি চান সেটা ঠিক করে নিন। ফিটনেস বাড়ানোর ব্যায়াম ও বডি বিল্ডিং এর ব্যায়াম খানিকটা হলেও আলাদা। যেমন ফিটনেস বাড়ানোর জন্য আমরা দৌড়, সাঁতার, সাইক্লিং করি। এগুলোতে আপনার প্রচুর ক্যালরী খরচ হয় বলে এসব ব্যায়াম ফিটনেসের সাথে সাথে ওজন কমাতেও খুব কাজে আসে। ফিটনেস বাড়ানোর ব্যায়াম সম্পর্কে অন্য সময় আলোচনা করবো। আজ করবো শুধুই বডি বিল্ডিং নিয়ে।

জিমে গিয়ে অতি উৎসাহীরা প্রচুর ব্যায়াম করা শুরু করেন। কিন্তু খুব তাড়াহুড়ো করে লাভ নাই। ধীরে ধীরে সব কিছু বাড়াতে হবে। আমাদের এই ব্লগে নিয়মিত বডি বিল্ডিং নিয়ে টিপস পাবেন।

বডি বিল্ডিং নিয়ে  একটা চরম সত্য কথা হলো, আপনার যদি শরীরের পেছনে মাসে ৯/১০ হাজার টাকা খরচ করার মত সামর্থ্য না থাকে, তাহলে এ’ লাইনে চিন্তা না করায় ভাল। আমি সিরিয়াস টাইপ বডি’র কথা বলছি অবশ্য। যেখানে আপনি শার্ট খুললে সবার মুখ হা হয়ে যায়- সেরকম। বডি বিল্ডিং করতে বেশ কঠোর নিয়ম শৃংখলা মেনে চলতে হয়। জিমে গিয়ে বডি তৈরী হয় না, বডি তৈরী হয় বাড়ীতে। আপনার ঘুম, ডায়েটই প্রধান।

যারা জানেন না তাদের বলি, জিমে গিয়ে আমরা পেশীগুলোকে স্ট্রেচ করার মাধ্যমে ওগুলো ছোট ছোট ভাবে আক্ষরিক অর্থে ছিঁড়ে যায়। শরীর তখন সেটাকে আরও মজবুত ও বড় করে তৈরী করে। আর এই তৈরীর পুরো কাজটা করে আপনার খাবার ও ঘুম। যেহেতু প্রতিটি পেশী সপ্তাহে এক/দুই বার ট্রেইন করা হয়-বাকি রেস্টের দিন বা ঘুমের সময় শরীর সেগুলোকে রিপেয়ার করে। এভাবে ৫/৬ মাসের মধ্যেই শরীরের চেঞ্জগুলো ভিসিবল হতে থাকে। কিন্তু রিপেয়ার করতে প্রধান যেটা দরকার তা হচ্ছে প্রোটিন।

 ডায়েট চার্ট

যারা প্রথম জিমে জয়েন করতে যাচ্ছেন তারা প্রথমে আপনার শরীরের ওজন মেপে নিন। আপনার ওজন যদি ৬০কেজি হয় তাহলে আপনার প্রতিদিন ক্যালরী প্রয়োজন ৬০*২৫ = ১৫০০ ক্যালরী। অর্থাৎ আপনার শরীরের ওজনের (কেজি) সাথে ২৫ দিয়ে গুন করলে যা ফলাফল আসবে সেটা আপনার  জন্য প্রয়োজনীয় ক্যালরী। সপ্তাহে যারা ভারী ব্যায়াম করবেন তাদের এর সাথে ১.৪ গুন যুক্ত করতে হবে। ১৫০০*১.৪ = ২১০০ ক্যালরী।  এর মধ্যে ৫০ ভাগ হবে কার্বোহাইড্রেট, ৩৫ ভাগ প্রোটিন এবং ১৫ ভাগ হবে ফ্যাট।

বেশির ভাগ খাবার প্রাকৃতিক খাবার হলেই ভাল। তারপরেও আপনাকে একটা হোয়ে প্রোটিন লাগবেই। কারন ব্যায়ামের পর পরই আপনি ডিম,মাছ যা খাবেন তা হজম হতে বেশ কয়েক ঘন্টা সময় প্রয়োজন। কিন্তু হোয়ে প্রোটিন খুব তাড়াতাড়ি প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করতে পারে। তাই খুব ভাল মানের প্রোটিন যেটাতে প্রতি স্কুপে ২০-৩০ গ্রাম থাকে তা এক স্কুপ যেকোন খাবারের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।

তবে সাবধান থাকবেন, সেটা যেন অথেনটিক প্রোডাক্ট হয়। বাজারে দুই নম্বর প্রোডাক্টে ভরে আছে। ওগুলো কখনই কিনবেন না। আর একবারে খুব বেশি প্রোটিন খেয়ে লাভ হবে না। কিভাবে কখন কতটা খাবেন তার একটা চার্ট দেওয়ার চেষ্টা করবো। মনে রাখবেন এই চার্ট সিরিয়াস বডি বিল্ডারদের জন্য। আপনি কাজ চালানোর মত বডি চান, তাহলে একটু কমিয়ে দিতে পারেন ডায়েটের পরিমাণ।

এখানে আমি যে চার্ট দেব তা একজন ৭০ কেজি ওজনের পুরুষের জন্য।

নিয়মটা হচ্ছে প্রতি কেজি ওজনের জন্য আপনার প্রতিদিন প্রোটিন প্রয়োজন ২.২-২.৫ গ্রাম। অর্থাৎ ৭০*২.২ = ১৫৪ গ্রাম।

  • প্রতিটি ডিমে প্রোটিন থাকে ৬ গ্রাম।
  • ১০০ গ্রাম মাছে থাকে ২৩-৩০ গ্রাম। (মাছ হিসেবে প্রোটিনের ওঠানামা। শুঁটকি মাছে থাকে প্রতি ১০০ গ্রামে ৬৩ গ্রাম প্রোটিন। ফরমালিন বাদে বললাম।) মাছ খাওয়া গোশতের চেয়ে নিরাপদ।
  • ১০০ গ্রাম মুরগীতে প্রোটিন থাকে ৩১ গ্রাম। (দু:খের কথা সাথে ক্রোমিয়াম ফ্রি।)
  • রেড মিট মানে গরু ছাগলের মাংসেও অনেক প্রোটিন থাকে। তবে কোলেস্টেরল এর কথা ভেবে এটা বাদ দিতে হবে।

প্রচলিত ডায়েটের সাথে যা লাগবে তা হচ্ছে:

  • ভালমানের হোয়ে প্রোটিন। যার মধ্যে ক্রিয়েটিন, গ্লটামিন ইত্যাদিও থাকবে।
  • ফিশ ওয়েল।
  • একটা খুব ভালমানের মাল্টি ভিটামিন।

 

  • সকাল:

৫০গ্রাম ওট মিল ২০০ মিলি দুধ দিয়ে বানানো, ৮-১০টা আলমন্ড, ২টা খেজুর, ২টা ওয়ালনাট, ৬ টা ডিম। (তার মধ্যে ৪ টা শুধু সাদা অংশ, ২টা কুসুম সহ।)

  • দুপুর:

২০০ গ্রাম মাছ বা মাংস, ১৫০ গ্রাম ভাত এবং এক বাটি সবুজ শাক-সবজি। দুপুরের খাবারের দুই ঘন্টা পর খাবেন প্রি ওয়ার্ক আউট মিল

  •  ব্যায়ামের দু’ঘন্টা আগে:

২৫ গ্রাম ওটমিল, ৪টা ডিম ((তার মধ্যে ২ টা শুধু সাদা অংশ, ২টা কুসুম সহ।)

  • পোস্ট ওয়ার্ক আউট মিল বা ব্যায়ামের পরে:

১টা কলা, ব্রকলি ১টা, বাদাম, এক স্কুপ হোয়ে প্রোটিন। ছোট করে কেটে পানি মিশিয়ে ব্লেন্ড করে খেতে পারবেন।

  • রাতের খাবার।

১৫০ গ্রাম মাছ, ১০০ গ্রাম সাদা বা মিষ্টি আলু, একটা শসা, লেবু এবং এক বাটি সবুজ শাক সবজি।

পানি খাবেন সারা দিনে ৮/৯ গ্লাস। প্রস্তরযুগে ব্যায়ামের সময় কেউ পানি পান করতে দিত না। কিন্তু আপনি ব্যায়াম চলাকালীণও মাঝে মাঝে গলা ভেজাতে পারেন। ক্ষতি নাই। ৮/৯ ঘন্টা ঘুম অবশ্যই ঘুমাতে হবে। রাতের ঘুম টা প্রয়োজন। ঘুমটা হতে হবে শান্তি পূর্ণ। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে বেশি পানি খাবেন না। নইলে একটু পর পর টয়লেট যেতে গিয়ে ঘুম নষ্ট হবে।

মাল্টিভিটামিন, ফিশওয়েল প্রত্যেকদিন খাবেন আপনার সুবিধা মত। এখানে গাদা গাদা সাপ্লিমেন্ট খাওয়ার কথা বলা হয়নি। যা অনেক জিমে সাজেস্ট করা হয়। শুধু একটা ভাল মানের হোয়ে প্রোটিন কিনলেই হবে।

এই ডায়েটের আদলে আপনি নিজেও আপনার সুবিধামত ডায়েট বানাতে পারেন। দেখুন এখানে মিষ্টি খাবার নেই বললেই চলে। চা হার্টের জন্য ভাল। গ্রীন টি খান। এনার্জি ড্রিং পুরোই এড়িয়ে চলুন। কোল্ড ড্রিংকস চিনিতে ভরা। আমাদের দেশের সব খাবারেই চিনি।

Photo: Google

চিনিময় জীবন থেকে বের হতে হবে। তাই তো বছরের পর বছর লেগে থেকেও সিক্স প্যাক দড়ি দিয়ে করতে হয়। এখানে কি কি ব্যায়াম করবেন, বলা হয়নি। সব আলোচনা করা হবে ধীরে ধীরে। আজ এই পর্যন্তই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Don`t copy text!